মোঃ আজগার আলী, জেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরা:  
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল গনির সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে তদন্ত ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষকদের প্রাণবন্ত উপস্থিতিতে তদন্ত কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। অধিকাংশ শিক্ষক ও কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন বলে জানা গেছে। তবুও আজ পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ হতে আব্দুল গনির বিরুদ্ধে কোন ধরনের বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে আব্দুল গনির পূর্বের দুর্নীতির ধারাকে অব্যাহত রাখার জন্য স্লিপের বিলসহ সকল বিল পাশ না করিয়ে রেখে দিয়েছে। তার সাফ কথা ঘুষের টাকা না পেলে বিল পাশ হবে না। ডিসেম্বরের মধ্যে স্লিপ ফান্ডের ১ম কিস্তির টাকা স্ব-স্ব বিদ্যালয়ের হিসাব নম্বরে পাঠানোর সরকারি নির্দেশনা থাকলেও আব্দুল গনি সে নির্দেশনা মানেননি।
আব্দুল গনি বরাবরই নিয়মনীতি ও সরকারি নির্দেশনার তোয়াক্কা করে না। অবশেষে মিটিং করে স্কুল প্রতি ফের ৮০০ টাকা করে ঘুষ দাবি করলে কতিপয় শিক্ষক বাধ্য হয়ে ঘুষের দাবি মেনে নিয়ে টাকা উত্তোলন করেছে। যেসকল শিক্ষক ৮০০ টাকা দিতে অস্বীকার করছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠিন অবস্থানে গিয়ে বিভাগীয় মামলাসহ বিভিন্ন হয়রানি করার হুমকি প্রদর্শন করা হচ্ছে। এভাবে ১ম কিস্তিতে ১ লক্ষ ৬২ হাজার টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে।
আব্দুল গনি ঘুষ নির্বিঘ্নে উত্তোলন করার সুবিধার্থে ৪ মাসের ব্যবধানে এটিই ওদের ক্লাস্টার পরিবর্তন করে দিয়েছে। সর্বশেষ ক্লাস্টার পরিবর্তন করে দেয় ৩০ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে। গত ৩ মার্চ ২০২৪ তারিখে (২৮-০২-২০২৪ তারিখের ব্যাকডেটে) স্বাক্ষর করে ক্লাস্টার পরিবর্তন সংক্রান্ত চিঠি জারি করা হয়। ০৫-০৩-২০২৪ তারিখে নতুন ক্লাস্টারে দায়িত্ব পালন করার জন্য চিঠিতে বলা হয়েছে। ক্লাস্টার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে চাটুকারিতাতে সে সকল অফিসার পারদর্শী তাদেরকে সুবিধা বেশি ও সুগম অঞ্চলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
যাদের মোটরসাইকেল নেই ও চালনায় কম পারদর্শী তাদেরকে অপেক্ষাকৃত দুর্গম ও দূরবর্তী ক্লাস্টারের দায়িত্ব প্রদান হয়েছে। সবচেয়ে বেশি দূরত্বে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার দুলাল চন্দ্র সরকারকে। একমাত্র মহিলা সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার নাহিদ আক্তারকে ২য় দূরবর্তী ক্লাস্টারের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
অথচ যারা জুনিয়র অফিসার তাদেরকে নিকটবর্তী ও সদর ক্লাস্টারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন যারা আব্দুল গনির ঘুষ ও অনিয়মে সহায়তা করে তাদেরকে সুবিধা দিতে ব্যাকডেটে ক্লাস্টার পরিবর্তনের এ আদেশ প্রদান করা হয়েছে। সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারদেরকে শিক্ষকদের ধরার জন্য ঠিক সকাল ৯ টায় স্কুলে গিয়ে ছবি তুলে আব্দুল গনির হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাতে নির্দেশনা প্রদান করছেন।
শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শিক্ষকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করলে শিক্ষার কর্মপরিবেশ বিনষ্ট হয়। যার ফলে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে বাঁধা সৃষ্টি হয়। আব্দুল গনি বিগত প্রায় ৪ বছর ধরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় থাকাকালীন ঘুষ, দুর্নীতি, বই বিক্রি, খাতা বিক্রি, নিলাম ব্যতীত ভবন ও গাছ বিক্রিসহ অসংখ্য অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে শিক্ষার কাক্সিক্ষত পরিবেশ সৃষ্টিতে বাধা প্রদান করে সরকারি দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা ও অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছে। অথচ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চোখে ধূলো দিয়ে আব্দুল গনি সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়ম করে পার পেয়ে যাচ্ছে বারংবার।
এ ব্যাপারে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার দুলাল চন্দ্র সরকারকে দুরবর্তী ক্লাস্টারের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব দিয়েছে, পালন করতে বাধ্য।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল গনির বক্তব্য পাওয়া যায়নি।